স্বদেশ ডেস্ক:
গাজীপুরে অনলাইনে পণ্য কিনতে গিয়ে ডেলিভারিম্যানের প্রতারণার শিকার হয়েছেন শিক্ষার্থী ও উঠতি বয়সেরসহ কয়েকজন নারী। অনলাইনে পণ্য ডেলিভারির সময় অভিনব কায়দায় ওই নারীদের মোবাইলে গুগল অ্যাড্রেস যুক্ত করে তাদের ব্যক্তিগত তথ্য ও আপত্তিকর ছবি সংগ্রহ করে ব্ল্যাকমেইল করা হতো।
এ অভিযোগে একটি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের এক ডেলিভারিম্যানকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
শনিবার (১১ ফেব্রুয়ারি) গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের (জিএমপি) অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার রেজোয়ান আহমেদ এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়েছেন। এ সময় সহকারী কমিশনার ফাহিম আসজাদ ও আসাদুজ্জামান এবং সদর থানার ওসি জিয়াউল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।
গ্রেফতার ব্যক্তির নাম মিজানুর রহমান ওরফে আল-আমিন (২২)। তিনি জামালপুর জেলার ইসলামপুর থানার চরগাঁওকোড়া গ্রামের মৃত আজিম উদ্দিনের ছেলে। তিনি গাজীপুর জেলা শহরের রথখোলা এলাকার (জেলা পরিষদের বিপরীতে) স্বপনের বাসায় ভাড়া থাকতেন।
জিএমপি’র অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার রেজোয়ান আহমেদ বলেন, গাজীপুর শহর এলাকার হাশেম (ছদ্মনাম) নামে এক ব্যক্তি অভিযোগ করেন যে, তার মেয়ে অনন্যা আক্তার (ছদ্মনাম) স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থী। কয়েকদিন আগে অনন্যা একটি অনলাইনে পণ্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান থেকে ম্যাজিক বক্স কেনার অর্ডার করেন। গত ৫ ফেব্রুয়ারি ওই ডেলিভারিম্যান মিজানুর রহমান মোবাইল ফোনে অনন্যার সাথে যোগাযোগ করে বাসায় আসে এবং পণ্য দিয়ে যায়। এ সময় সে গুগল লোকেশন অ্যাড করার কথা বলে অনন্যার মোবাইলটি হাতে নেয়। পরে অনন্যার কিছু আপত্তিকর কিছু ছবি ওই ডেলিভারিম্যান বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়ে টাকা দাবি করছে। টাকা না দিলে অনন্যা আক্তারের ছবি ভাইরাল করার হুমকি দেয় সে। এতে তার মেয়ে লোকলজ্জার ভয়ে মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে এবং পড়ালেখা বন্ধ করে দিয়ে একাধিকবার আত্মহত্যার চেষ্টা চালায়। ফলে ভুক্তভোগী পরিবারটি গত এক সপ্তাহ যাবৎ দুর্বিষহ সময় পার করছিল।
এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় ডেলিভারিম্যান মিজানুর রহমান ওরফে আল-আমিনকে (২২) শুক্রবার দিবাগত রাতে জয়দেবপুর রথখোলা এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতার মিজান নিজের অপরাধ স্বীকার করেছে। এ ঘটনায় শনিবার সদর থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা ও পর্নগ্রাফি আইনে মামলা দায়ের করেছেন ভিকটিমের বাবা।
গ্রেফতার মিজানের বিরুদ্ধে জামালপুরে একটি হত্যা মামলা রয়েছে বলেও জানান রেজোয়ান।
তিনি গ্রেফতার মিজানের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে আরো জানান, তার অনলাইন শপে পণ্য অর্ডার দানকারী নারী ও উঠতি বয়সী মেয়েদের মূলত টার্গেট করতো ডেলিভারিম্যান মিজানুর রহমান ওরফে আল-আমিন। অর্ডার দেয়া পণ্য ডেলিভারির সময় উক্ত ডেলিভারিম্যান ক্রেতার গুগল লোকেশনে অ্যাড্রেস অ্যাড করে দেয়ার কথা বলে কৌশলে ক্রেতার মোবাইলটি হাতে নিত। তারপর ক্রেতার মোবাইলের গুগল ফটোতে ঢুকে শেয়ারিং অপশনে গিয়ে ‘শেয়ার উইথ পার্টনার’ হিসেবে ধৃত ডেলিভারিম্যান তার ব্যক্তিগত জিমেইল একাউন্ট অ্যাড করে মোবাইলটি ক্রেতাকে কোনোকিছু বুঝে উঠার আগেই ফেরত দিয়ে দিত। কাজটি সম্পন্ন করতে সময় নিত ১/২ মিনিট। পরে তার সুবিধামতো সময়ে মোবাইলের গুগল ফটোতে ঢুকে শেয়ারকৃত নারী ক্রেতার গুগলে থাকা সকল ছবি তার মোবাইলে ডাউনলোড করে নিয়ে নিত।
এভাবেই ধৃত ডেলিভারিম্যান ভিকটিম অনন্যা আক্তারসহ অনেক নারীর আপত্তিকর ও গোপন মুহূর্তের ছবি নিয়ে ব্ল্যাকমেইল করাসহ টাকা দাবি করতো। এমনকি অনেক নারীকে তার সাথে শারিরীক সম্পর্ক করার প্রস্তাব দিত। দাবি পূরণ করা না হলে নেটে ছেড়ে ভাইরাল করার হুমকি দিত সে।
গ্রেফতার ব্যক্তির মোবাইলে এমন বহু নারীর ব্যক্তিগত ও অন্তরঙ্গ মুহূর্তের এবং আপত্তিকর অনেক ছবি পাওয়া গেছে। এছাড়াও বিভিন্ন জনের ১১টি ই-মেইল আইডি লগইন অবস্থায় পাওয়া যায়। যাদের আইডি লগইন অবস্থায় পাওয়া গেছে তাদের বিস্তারিত নাম-ঠিকানা সংগ্রহের চেষ্টা চলছে।